চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। অধিকাংশই শিশু রোগী। চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। শয্যা সংখ্যার বিপরীতে তিন – চারগুণ রোগী বেশী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশী ভর্তি হচ্ছে। আমাদের শয্যা ও জনবল সংকটের পরও চিকিৎসক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। শীতকালে শিশু ও বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন আক্রান্ত হয়ে থাকে।
অতি শীতের জেলা হিসাবে পরিচিত চুয়াডাঙ্গা। এখানে শীতের সময় বেশি শীত এবং গরমের সময় বেশি গরম অনুভূতি হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে চলতি শীতেও কয়েকদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শীতের আগমনে সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এদের অধিকাংশ শিশু রোগী। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। এছাড়াও বর্হিবিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ৩ শতাধিক। দুটি ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যার বিপরীতে তিন -চারগুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে নার্স ও সেবিকাদের। রোগীর স্বজনদের অনেকেই অতিরিক্ত ভিড় এবং চিকিৎসা সেবায় কিছুটা ধীরগতির অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও বেশি ভাগ ঔষধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার কালুপোল গ্রামের এক শিশু পিতা আনিচ বলেন, আমার ২৩দিনের বাচ্ছা ৯দিন দিন আগে ডায়েরিয়ার সমস্যা নিয়ে ভর্তি করি। রোগীর এত চাপ যে এখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। তারপরেও বাচ্ছা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত থাকতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা আকন্দবাড়িয়া গ্রামের নাজমা খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়ের পাতলা পায়খানা আর বমি হচ্ছিল। শুক্রবার সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। হাসপাতাল থেকে খাওয়ার স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ দিলেও স্যালাইন সেট ও ক্যানোলা সাপ্লাই নেই। এগুলো বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন,শীতের সময় শিশুরা বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাদের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে না পারলে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাঁশি বা রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। শিশু ওয়াডে ১৫ আসনের বিপরীতে প্রতিদিনই প্রায় অর্ধশত রোগী ভর্তি থাকছে । এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগী বেশি। বিশেষ করে শিশুরা রোটা ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এর কোনো মেডিসিন না থাকায় ৪ থেকে ৫ দিন শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত থাকছে। ৫ দিন পর ভাইরাস মারা গেলে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে তারা।
এ থেকে প্রতিকার পেতে ডা. মাহবুবর রহমান মিলনের পরামর্শ, শিশুদের বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। শিশুদের প্রতি বেশি যত্ন নিতে হবে। মোটা কাপড় পরিধান করাতে হবে। রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। ১ দিন থেকে ৬ মাসের শিশুদের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানো যাবে না। খিচুড়ি খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে। ডায়রিয়া হলে বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রকিব সাদী হাসপাতালে স্যালাইন সেট ও ক্যানোলা না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আশা করছি খুব শীঘ্রই এ গুলো চলে আসবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক, ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন,চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বর্তমানে ৩ শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে শীত জনিত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। তবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। আমাদের সাধ্যের মধ্যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।