জামালপুরে প্রথমবারের মতো সৌদি আরবের বারহি ও মেডজুল জাতের খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। সদর উপজেলার গাধাখালেরপাড়া গ্রামের স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম হেলাল তিন একর জমিতে গড়ে তুলেছেন এই খেজুরবাগান। পাঁচ বছর আগে ভারতের রাজস্থান থেকে ১৯০টি চারা এনে রোপণ করেছিলেন তিনি। এখন তার বাগানে নিয়মিত ফলন আসছে। রফিকুল ইসলাম জানান, ‘বাংলাদেশে খেজুরের বাগান তেমন নেই বললেই চলে। তাই আমি সাহস করে বাগান করার উদ্যোগ নেই। তিন বছর ধরে ফলন আসছে। এবার ফলন আরও ভালো হয়েছে। প্রতিটি গাছে ৩০ কেজিরও বেশি খেজুর এসেছে। প্রতিটি চারা ১৫ হাজার টাকা এবং প্রতি কেজি খেজুর ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে।’
বাগানে বর্তমানে ৩৬টি গাছে থোকা থোকা সোনালি-হলুদ খেজুর শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি গাছেই গড়ে প্রায় ত্রিশ কেজি ফলন মিলেছে। শুধু খেজুর নয়, গাছ থেকেও চারা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি গাছে পাঁচ থেকে ছয়টি চারা তৈরি হয়েছে। চারার চাহিদাও কম নয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দূর-দূরান্তের কৃষকরা চারা কিনে বাগান করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।বাগানের শ্রমিকরা জানালেন, নিয়মিত পরিচর্যা, সার প্রয়োগ ও প্রয়োজনমতো কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এতে ফলন ভালো হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন বাগান দেখতে। খেজুরের পাশাপাশি চারা বিক্রিও চলছে।স্থানীয়রা জানান, আগে খেজুরকে মরুভূমির ফল বলে মনে করা হতো। কিন্তু এখন জামালপুরের গ্রামেই মরুভূমির সেই ফলের বাগান তৈরি হয়েছে। হাবিবুর রহমান নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আরবের মরুভূমিতে খেজুরবাগান হয় শুনেছি। কিন্তু আমাদের গ্রামেও খেজুর হচ্ছে— এটা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। খেজুরগুলোও খুব সুস্বাদু, দামেও কম।’
বাগান দেখতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘প্রত্যন্ত গ্রামে এমন খেজুরবাগান হবে, ভাবিনি। খেজুর খেতে সুস্বাদু লেগেছে। আমি দুই কেজি কিনে নিয়েছি।’
উদ্যোক্তা রফিকুলের এই সাফল্যে কৃষি বিভাগও পাশে দাঁড়িয়েছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘এলাকাটি মধুপুর গড়ের কাছাকাছি হওয়ায় মাটি খেজুর চাষের জন্য উপযোগী। বাগানে জৈবসারের চাহিদা মেটাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ভার্মিকম্পোস্ট প্ল্যান্ট দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা উদ্যোক্তাকে খেজুরের পাশাপাশি মিশ্র বাগান করার পরামর্শ দিচ্ছি।’ খেজুরের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। খেজুর বিক্রি করে রফিকুল যেমন লাভবান হয়েছেন, তেমনি চারার ব্যবসাও তাকে আরও এগিয়ে নিচ্ছে।প্রথম দিকে স্থানীয়রা তার উদ্যোগ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। অনেকের ধারণা ছিল, মরুভূমির ফল বাংলাদেশে ফলবে না। কিন্তু এখন বাগান থেকে পাওয়া ফলই সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। বাগানের খেজুরের স্বাদ মানুষকে টেনে আনছে। ফলে এলাকায় নতুন উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়ছে।কৃষি বিভাগ বলছে, আবহাওয়া অনুকূল হলে দেশে খেজুর চাষ আরও বিস্তৃত হতে পারে। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। উদ্যোক্তারা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও যোগ হবে নতুন মাত্রা।
স্থানীয় উদ্যোক্তা রফিকুলের এই সাফল্য প্রমাণ করেছে, সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রম থাকলে মরুভূমির ফলও বাংলার মাটিতে শিকড় গেড়ে দিতে পারে।