সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম চলমান। এসব সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাংকিং খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, খেলাপি ঋণ কমানো, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন নিশ্চিত করা। তবে, ব্যাংক খাতের উদ্যোক্তা এবং শীর্ষ নির্বাহীরা মনে করছেন, যে কোনো সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণের আগে তাদের সাথে আলোচনা করা উচিত, কেননা তারা এসব নীতি বাস্তবায়ন করবেন।
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যার মধ্যে রয়েছে:
সুশাসনের অভাব,অতিমাত্রায় খেলাপি ঋণ,নীতিমালা বাস্তবায়নে অনীহা,তারল্য সংকট,রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ফ্রেমওয়ার্কে ত্রুটি,রাজনৈতিক প্রভাব,ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে পিছিয়ে থাকা বিশ্লেষকদের মতে, যদিও এসব চ্যালেঞ্জ পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়, তবে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এগুলোর কিছুটা সমাধান করা সম্ভব।
বিএবি এর চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেছেন, যে কোনো সংস্কার পদক্ষেপ বা নীতিমালা প্রণয়ন করার আগে ব্যাংক খাতের স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করা উচিত। তিনি মনে করেন, শুধুমাত্র নীতি প্রণয়নের পর তা বাস্তবায়ন করা ব্যাংক খাতের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে।শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তার মতে, সরকারি ব্যাংকগুলো যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি এবং নিরীক্ষা কার্যক্রম যদি যথাযথভাবে পরিচালিত হয়, তবে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করা বা ভুল আর্থিক বিবরণী প্রকাশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন তিনি। ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো শক্তিশালী এবং টেকসই ব্যাংকিং খাত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি মনে করেন, ব্যাংকগুলোর জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক ব্যাংক নীতিমালা মানে না।জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারভিশন, গাইডেন্স এবং তদারকি আরও শক্তিশালী করতে হবে। ব্যাংক খাতের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।
ব্যাংক খাতের সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেয়া উচিত।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করা এবং সরকারি ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণে আনা।ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং তারল্য সংকট মোকাবিলায় স্বল্পসুদে সহায়তা প্রদান। খেলাপি ঋণ এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া, এবং ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য নিয়মিত নিরীক্ষা চালানো।বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সংস্কারের জন্য প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপ এবং সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা। যদি বাংলাদেশ ব্যাংক তার সক্ষমতা বাড়ায় এবং ব্যাংক খাতের সঠিক তদারকি ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে, তবে দেশের ব্যাংকিং খাত আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।