পত্রিকার পাতা
ঢাকাশুক্রবার , ৩রা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উদ্যোক্তা
  5. কর্পোরেট
  6. কৃষি ও প্রকৃতি
  7. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  8. খেলাধুলা
  9. চাকরির খবর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. তারুণ্য
  13. ধর্ম
  14. পর্যটন
  15. প্রবাস
আজকের সর্বশেষ সব খবর

ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজ সংস্কার

Md Abu Bakar Siddique
আগস্ট ১৩, ২০২৫ ৭:২২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সমাজ সংস্কার একটি সুন্দর-মনোরম স্বপ্ন, মানুষের হৃদয়ের সুদীর্ঘ-গভীর আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। এই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয় যখন মানবতার সর্বোচ্চ গুণাবলি- খোদাভীতি, প্রেম-ভালোবাসা, ত্যাগ-কোরবানি, নীতি-নৈতিকতা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও প্রশংসার অনুভূতি জীবনের প্রতিটি গতিপথকে আলোকিত করে। হজরত আবুজর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেছেন, তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর, পাপ করলে সঙ্গে সঙ্গে পুণ্যও কর; যাতে পাপ মোচন হয়ে যায় এবং মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার কর (মুসনাদে আহমাদ-২১৩৫৪, তিরমিজি-১৯৮৭)। একটি বাগান যেমন ফুলের রং ও মনোরম-মিষ্টি গন্ধে সুরভিত হয়, তেমনি সামাজিক সৌন্দর্য প্রতিটি ব্যক্তির সদাচার, চরিত্রের বিশুদ্ধতা ও অন্যদের প্রতি সদিচ্ছার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। সমাজ সংস্কারের প্রথম ধাপ হলো প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সংস্কার। যখন প্রতিটি মানুষ তার হৃদয় ও মনকে সদাচার, ন্যায়-বিশ্বস্ততা ও সততার অলংকার দিয়ে সজ্জিত করবে, তখনই সামাজিক সংস্কার-সৌন্দর্যে সে অবদান-ভূমিকা রাখল। প্রতিটি ফোঁটা যেমন সমুদ্রের গভীরতা ও প্রস্থ বৃদ্ধি করে, তেমনি প্রতিটি ব্যক্তির সদাচার ও নৈতিকতা সামাজিক সংস্কারের ভিত্তিকে শক্তিশালী করে। সামাজিক সৌন্দর্যের সূত্রপাত হয় সততা-নৈতিকতা, প্রেম-ভালোবাসা ও সহনশীলতা থেকে। যখন আমাদের হৃদয়ে অন্যদের প্রতি সদিচ্ছার অনুভূতি থাকে, ইখলাস-আন্তরিকতা ও ভদ্রতা গড়ে ওঠে, তখন সমাজ সুকৃতি-সৌন্দর্যের জীবন্ত উদাহরণ হয়ে ওঠে। হাদিস শরিফে এসেছে হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত; রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ প্রকৃত ইমানদার হতে পারবে না; যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে (বুখারি শরিফ-১৩, মুসলিম শরিফ-৪৫, ইবনে হিব্বান-২৩৫)।

সমদর্শিতা-ন্যায়বিচার, সহনশীলতা ও সাম্যের নীতি মরূদ্যানের শীতল ছায়ার মতো সামাজিক সম্পর্ককে শক্তিশালী ও সতেজ করে। ইখলাস-আন্তরিকতা ও ত্যাগ-কোরবানি হলো সামাজিক অগ্রগতির সবচেয়ে সুন্দর ভিত। যখন একজন ব্যক্তি অন্যের উন্নতি-সমৃদ্ধি ও সফলতাকে নিজের জীবনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, তখন কেবল তার নিজের হৃদয়ই নয়, সমাজও সুখের সুবাসে ভরে ওঠে। হজরত আবু রুকাইয়াহ তামিম বিন আওস দারি (রা.) থেকে বর্ণিত; রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কল্যাণ কামনা করার নামই দীন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম কার জন্য?’ তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রসুলের জন্য, মুসলিম শাসকদের জন্য ও মুসলিম জনসাধারণের জন্য (মুসলিম শরিফ-২০৫)। কল্যাণ কামনা মানুষের মহান মূল্যবোধ ও প্রেম-ভালোবাসা থেকে উৎপাদিত চিরন্তন সুবাস, এর প্রতিটি কোণে মানবতার মহত্ত্বের গান প্রতিধ্বনিত হয়। যখন মানুষ তার জীবনকে অন্যদের জন্য আলো ও আশার উৎস করে তোলে, তখন সামাজিক পরিপূর্ণতা অর্জন হয়। যখন হৃদয়ে মহান আল্লাহর ভয় ও মানবজাতির প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা জন্মায়, তখন সমাজ একটি উজ্জ্বল আয়না হয়ে ওঠে, যেখানে বিশ্ব সৌন্দর্য-সুকৃতির প্রতিফলন দেখে।

যদি প্রতিটি ব্যক্তির চিন্তাভাবনা, ক্রিয়াকর্ম ও আবেগে সদাসর্বদা ইখলাস-আন্তরিকতা বিরাজ করে, তাহলে সামাজিক সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। সমাজ সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো প্রত্যেক ব্যক্তি-বস্তুকে তাদের স্বস্থান ও পদে রাখা। রসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মূল্য বুঝতেন এবং প্রতিটি ব্যক্তির সঙ্গে তার যথাযথ মর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করতেন। এটি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্তর্দৃষ্টি ও নৈতিক আচরণ। এই মহৎ গুণাবলি তিনি আমাদের ও তাঁর সাহাবিদের কথা ও কাজের মাধ্যমে শিখিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : ‘রসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের মানুষের সঙ্গে তাদের যথাযথ স্থান-মর্যাদা অনুসারে আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন’ (আবু দাউদ-৪৮৪২)।

রসুলুল্লাহ (সা.) এই হাদিসে মানুষকে তাদের মূল্যবোধ, পদমর্যাদা ও অবস্থান বিবেচনা করে সংগতিপূর্ণ আচার-আচরণের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। প্রকৃত মুমিন মানুষের সঙ্গে তাদের যথাযথ মর্যাদা অনুসারে আচরণ করবে, মানসম্মান ও প্রশংসার ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে সমান আচরণ করবে না, বরং ধর্মীয় পদমর্যাদা, বয়সের দিক থেকে পদমর্যাদা ও আমল-কর্তব্যপরায়ণতার দিক থেকে পদমর্যাদা অনুসারে আচরণ করবে। আরবি একটি প্রবাদ আছে : যার অর্থ হলো সবকিছুকে তার সঠিক স্থানে না রাখা অন্যায়। রসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অবস্থান-মর্যাদা অনুসারে সম্মান করতে এবং সবকিছুকে তার স্বস্থানে রাখতে আমাদের শিখিয়েছেন। সমাজ সংস্কারের যাত্রা অবশ্যই সুদীর্ঘ ও আকর্ষণীয়। এই যাত্রার পথগুলো অমূল্য, প্রতিটি পদক্ষেপ প্রেম-ভালোবাসা, নীতি-নৈতিকতা ও ভ্রাতৃত্বের উজ্জ্বল প্রদীপ দ্বারা আলোকিত।

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, মদিনাতুল উলুম মাদরাসা, বসুন্ধরা, ঢাকা

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।