গাইবান্ধায় যথেষ্ট বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিল, ডোবা ও মাঠে পানি জমেনি। এতে চাষিরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। কেউ কেউ কাটা পাট ভ্যানে করে দূরে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে খরচ বাড়ছে। অনেকেই পাট কেটে জমিতে রেখেছেন। বাজারে ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় চাষিরা। কৃষি বিভাগ জানায়, বর্ষা আরও দেরি করলে ক্ষতি বাড়বে। চাষিরা কম খরচে পাট সংরক্ষণ ও ন্যায্যমূল্যের দাবি জানিয়েছেন। সরকারি সহায়তা পেলে টিকে থাকবে পাট চাষ।
জেলার সাতটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব জমি থেকে প্রায় ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭ টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে নদীঘেঁষা কিছু এলাকায় প্রায় ১০ শতাংশ জমির পাট কাটা হয়েছে।
কিন্তু পানি সংকটের কারণে পাট জাগ দিতে পারছেন না অধিকাংশ চাষি। অনেকেই মাঠেই কাটা পাট ফেলে রেখেছেন। কেউবা আবার এক-দুই কিলোমিটার দূরে ভ্যানে করে কাটা পাট বয়ে নিচ্ছেন, যেখানে কিছুটা পানি আছে। এতে করে একদিকে সময় ও শ্রম ব্যয় হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে অতিরিক্ত খরচ।
সম্প্রতি সদর উপজেলার মালিবাড়ি, কামারজানি, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পাট কাটার কাজ চলছে। কিন্তু কাটা পাট জমিতে ফেলে রাখতে হচ্ছে অনেককেই। মাঠে ভেজাভাব থাকলেও পানি জমেনি, ডোবা-পুকুরেও পানির ঘাটতি। ফলে পাট জাগ দেওয়ার মতো উপযুক্ত জায়গা নেই।
মালিবাড়ি ইউনিয়নের কুরেরবাতা গ্রামের চাষি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘২০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট কাটা প্রায় শেষ। কিন্তু পানি না থাকায় ডোবায় বা জমিতে জাগ দিতে পারছি না।’
একই এলাকার মজিবর, শাহিন মিয়া ও সাইদুল ইসলাম জানান, ‘মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলেও সেটা খুবই অল্প। পানির অভাবে এখনো ধান খেতেও পানি জমেনি। এই অবস্থায় পাট জাগ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
কামারজানি এলাকার কয়েকজন কৃষক জানান, ‘নদীর পাশের কিছু কৃষক পাট কেটেছেন। কিন্তু জাগ দেওয়ার জন্য পানি নেই। কেউ কেউ ভ্যানে করে এক কিলোমিটার দূরে পাট নিয়ে যাচ্ছেন, এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পুকুরেও পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।’
শুধু পানির অভাব নয়, বাজারে পাটের দাম নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চাষিদের অভিযোগ, পাট উৎপাদনে খরচ বাড়লেও তারা ন্যায্য দাম পান না। ফলে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না অনেক সময়।
চাষিরা জানান সার ও বীজের দাম, সেচ ও শ্রমিক খরচ সব কিছুই বেড়েছে। কিন্তু যখন বাজারে ভালো দাম থাকে, তখন তাদের ঘরে পাট থাকে না। টাকার অভাবে আগেই কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা।
একজন চাষি বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে অনেকেই পাট চাষে আগ্রহ হারাবে। তাই সরকারকে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কম খরচে পাট সংরক্ষণের সরকারি ব্যবস্থা থাকা উচিত।’
জেলা কৃষি উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে রয়েছে। পাট চাষে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভারী বৃষ্টি হলে পানির অভাব কেটে যাবে এবং পাট জাগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।’
পাটচাষিরা বলেন, ‘সরকার পলিথিনমুক্ত দেশ গড়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে পাটের গুরুত্ব বাড়ছে। ভবিষ্যতে পাটশিল্পে বড় পরিবর্তন আশা করা যায়। তখন হয়তো আবার ফিরে আসবে সোনালি আঁশের সেই গৌরব।’
তবে তার আগে প্রয়োজন মাঠ পর্যায়ের সমস্যাগুলো সমাধান করা। পানিসংকট, সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না হলে এই সম্ভাবনাও হারিয়ে যেতে পারে। তাই এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি-জলবায়ু পরিবর্তনের এই বাস্তবতায় কৃষকের পাশে না দাঁড়ালে সোনালি আঁশের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।