এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ধুমধাম করে। বিয়ের পর ৮ আগস্ট স্বামীর প্রথম জন্মদিন পালন করেছেন অতি উৎসাহে। কে জানত মাত্র ৯ দিনের মাথায় সেই আগস্টেই স্বামীকে চিতায় তুলে দেওয়ার সাক্ষী হতে হবে প্রমি ধরকে। তাঁর স্বামী লিটু ধর গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। শুধু লিটু নয়, তাঁর বাবা দন্তচিকিৎসক শ্রীকান্ত ধরও একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
গতকাল বিকেলে পটিয়ার শান্তিরহাট বাদামতল এলাকায় তাঁদের বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাটিকে একটি লরি চাপা দিলে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়। সঙ্গে প্রাণ হারান অটোরিকশার চালক আলী আজগরও। শ্রীকান্ত ধর ছেলেকে নিয়ে পটিয়ার গৈড়লার বাড়ি থেকে মনসাপূজা শেষ করে শহরের বাসায় ফিরছিলেন। অন্যরা শহরের বাসায় ছিলেন।
দন্তচিকিৎসক শ্রীকান্ত ধরের বাসা পাঠানটুলি এলাকায়। তিন ছেলের মধ্যে লিটু মেজ। তিনিও বাবার সঙ্গে দন্তচিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন। দুজন বাড়িতে গিয়েছিলেন পূজা উপলক্ষে। শহরের বাসার পূজার আনন্দ মুহূর্তে বিষাদে রূপ নেয় বাবা-ছেলের মৃত্যুর খবরে। মনসাপূজার পাঁঠা বলি শেষে তাঁরা
লিটুর বড় ভাই মিঠু ধর বলেন, ‘একসঙ্গে বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। আমার ভাইটার বিয়ে করিয়েছি ফেব্রুয়ারিতে। ছয় মাস না যেতেই সব শেষ হয়ে গেল। প্রমিকে আমরা কীভাবে সান্ত্বনা দেব! সে খুব ভেঙে পড়েছে।’
ছোট ভাই টিটু ধর এক বছর আগে কানাডায় পড়তে গেছেন। বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে তিনিও কানাডা থেকে আজ বিমান ধরেছেন দেশের। ভাই ও বাবাকে হারিয়ে তাঁরা দিশাহারা।
মিঠু বলেন, ‘ছোট ভাইও এই খবরের পর কানাডায় থাকতে চাইছে না। সে আজ বিমানে উঠছে। সে এসেও বাবা ও ভাইয়ের মুখ দেখতে পারবে না। আজই সৎকার করা হবে।’
তাঁদের আরেক জ্যাঠাতো ভাই অপু ধর থাকেন ফিনল্যান্ডে। তিনিও কাকা ও ভাইয়ের এমন মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এমন মৃত্যু কীভাবে আমরা মেনে নেব! এত শোক কীভাবে সইব।’
স্বামী ও ছেলের সৎকারের জন্য অন্যদের সঙ্গে বাড়িতে গেছেন শ্রীকান্তের স্ত্রী লীলা ধরও। তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। ছেলের বউ প্রমিও তাঁর সঙ্গে বিধবা হলেন। এমন ঘটনায় প্রমি নিজে নির্বাক হয়ে পড়েছেন।
গৈড়লার গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাদ। এর মধ্যে চলছে বাপ-ছেলের শেষ বিদায়ের আয়োজন। বৃষ্টিতে বিঘ্নিত হচ্ছে সৎকারকাজ। স্বজনের কান্না হয়ে যেন ঝরছে ভাদ্রের বৃষ্টি