পাপেল মিয়া ও মেহেদী হাসান পারভেজ দুই ভাই। ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে বড় হয়েছেন। উচ্চশিক্ষা শেষ করে চাকরি করতেন। তবে বেতনে সংসার চালানো কঠিন ছিল। তাই ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। ইউটিউব দেখে ধারণা নিয়ে চাকরি ছেড়ে শুরু করেন দড়ি তৈরির কারখানা। বর্তমানে তাদের কারখানায় আটজন শ্রমিক কাজ করছে। প্রতি মাসে আয় করছেন ৩ লাখ টাকা। এখন তারা স্বনির্ভর ও সচ্ছল।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নুরপুর গ্রামে তাদের বাড়ি। সাদুল্লাপুর উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে নুরপুর গ্রাম। যেটা বনগ্রাম ইউনিয়নের অন্তর্গত। সুন্দরগঞ্জ-সাদুল্লাপুর সড়কের পাশে ১০ শতাংশ জমির ওপর তাদের দড়ির কারখানা গড়ে উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেশিনে সুতা দিয়ে দড়ি তৈরি হচ্ছে। শ্রমিকরা ব্যস্ত, দুই ভাই তদারকি করছেন। টিনশেড ঘরের পাকা মেঝেতে ছয়টি মেশিন বসানো হয়েছে। চিকন, মোটা ও মাঝারি সাইজের দড়ি তৈরি হচ্ছে।
পাপেল মিয়া বলেন, ‘ডিপ্লোমা শেষ করে চাকরি নিয়েছিলাম। কিন্তু ভালো লাগত না। চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই। আমার ছোট ভাই পারভেজ তখন রংপুরে চাকরি করত। সেও সন্তুষ্ট ছিল না। দুই ভাই মিলে ইউটিউবে বিভিন্ন জিনিস তৈরির ভিডিও দেখে দড়ি তৈরির ব্যবসা বেছে নেই। পরে দেশের বিভিন্ন কারখানা ঘুরে অভিজ্ঞতা নিই।’
তাদের কারখানায় তৈরি দড়ি ‘ফিতা রশি’ নামে পরিচিত। এটি ট্রাক, ট্রলি, ভ্যানের মাল বাঁধার কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্রামাঞ্চলে গরু বাঁধতেও এ দড়ি জনপ্রিয়।
প্রথম দিকে দৈনিক ৩০-৩৫ কেজি দড়ি উৎপাদন করতেন। বর্তমানে তা বেড়ে ৮০ কেজি হয়েছে। বছরে ছয় মাস এই দড়ির চাহিদা বেশি থাকে, তখন সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হয়। গাইবান্ধা ছাড়াও ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, নওগাঁসহ আশপাশের জেলাগুলোতে তাদের দড়ি বিক্রি হয়।
শুরুর দিকে মাত্র একজন কর্মচারী নিয়ে কারখানা চালু করেন। ব্যবসা ভালো চলায় কর্মচারী সংখ্যা বাড়িয়ে এখন আটজন করেছেন। শুরুতে ভাড়া জায়গায় কারখানা ছিল, পরে নিজস্ব জমিতে আধাপাকা টিনশেড ঘর তৈরি করেন।
পাপেল জানান, ‘প্রথমে প্রায় ৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছিল। আমাদের এত টাকা ছিল না। স্ত্রীর জমানো টাকা, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। মাত্র এক বছরে অনেকটা ঋণ পরিশোধ করেছি। চাকরির চেয়ে অনেক ভালো আয় হচ্ছে, জীবনমানও বেড়েছে।’
দুই ভাইয়ের স্বপ্ন, কারখানা বড় করা। এতে এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থান হবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন পুঁজি। সরকার সহযোগিতা করলে উৎপাদন বাড়িয়ে আরও কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হবে।