যাঁরা বিদেশের পরিবেশ সম্পর্কে জানেন, তাঁদের খুব ভালো করেই জানা আছে সেখানকার ফাস্টফুড সম্পর্কে। তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকলে বাইরে খেতে হলে ফাস্টফুড ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে আমাদের দেশেও খাওয়া-দাওয়ায় আরামের জুড়ি নেই। নিজ দেশের মাটি ও মানুষ কেবল নয়, খাবারও টানে খুব। যদিও ইদানীং ফাস্টফুডের উপর ঝুঁকি পড়েছে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম। তাই এখন ফাস্টফুডের বাজার রমরমা আর সেখানে টিনএজার ও কমবয়সীদের ভিড় উপচে পড়ছে। এর প্রভাব স্বাস্থ্যের পক্ষে কত বেশি খারাপ, তা জেনে-শুনেও পতঙ্গপালের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে কমবয়সিরা এসব খাবারের দোকানে। তাই ক্রমে স্থূলতা ও নানা রোগ হবে তরুণ-তরুণীদের জীবন-সহচর, এমন ধারণা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে নানা দেশে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা।
বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট-এ প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকার ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউট (এনএইচএলবিআই) পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে বারবার ফাস্টফুড খেলে টিনএজার ও তরুণদের দেহের ওজন অনেক বাড়ে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
১৫ বছর পর্যবেক্ষণের ফলাফল হলো, যাঁরা ফাস্টফুড রেস্তোরঁাঁয় প্রতি সপ্তাহে একবেলার কম আহার করেছেন, তাঁদের তুলনায় যাঁরা প্রতি সপ্তাহে দু’বেলা আহার করেছেন, তাঁদের দেহে ওজন বাড়তি ১০ পাউন্ড বেড়েছে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বেড়েছে দ্বিগুণ, আর একটি হলো টাইপ ২ ডায়াবেটিসের বড় ঝুঁকি। আবার ডায়াবেটিস হলো হৃদরোগের একটি বড় ঝুঁকি। শিল্পউন্নত দেশগুলোতে মেদবহুলতা ও ডায়াবেটিস যেমন বাড়ছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর ব্যতিক্রম ঘটছে না, তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
ফাস্টফুড খেলে শরীরের ওজন বাড়ার একটি কারণ হলো, এসব রেস্তোরাঁয় যে-কোনো এক বেলার খাবারে এত ক্যালোরি থাকে, যা সারাদিনের ক্যালোরি পূরণের সমান বা তার চেয়েও বেশী। ধীরে ধীরে রক্তে চিনি, তৈল আসার পরিবর্তে ফাস্ট ফুডে খুব দ্রুতই রক্তে এগুলো চলে আসে ফলে শরীরে এগুলোর আধিক্য দেখা দেয়। গবেষকেরাÑ দেখেছেন, কৃষ্ণকায় ও শ্বেতকায় উভয়ের মধ্যেই যাঁরা বারবার ফাস্টফুড রেস্তোরাঁয় আহার করেছেন, তাঁরা জীবনযাপন-চর্চায় পরিবর্তন আনলেও তাঁদের দেহের ওজন ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ওপর এসব আহারের বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন তিন হাজার ৩১ জন কৃষ্ণকায় ও শ্বেতকায় তরুণ-তরুণী, বয়স ১৮ থেকে ৩০ এর মধ্যে। গবেষণায় এও দেখা গেছে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি গেছেন ফাস্টফুড রেস্তোরাঁয় আহার করতে। তাই খুব সহজেই এগুলো ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, মুটিয়ে যাওয়া, গর্ভপাত, উচ্চ রক্তচাপ, সন্তনহীনতার মত রোগ শরীরে বাসা বাধছে। গবেষকরা বলেছেন যে, ফাস্টফুড যত কম খাওয়া হবে স্বাস্থ্য তত ভালো থাকবে।