পৃথিবীর যে সকল দেশে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তি সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছিল অর্থাৎ যে সকল দেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে সকল দেশে যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিল তাদের সন্তান-সন্ততি ও বংশধরেরা চাকুরি সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে একটা অগ্রাধিকার পায়। এই রাষ্ট্র আমরা পেয়েছি ৩০ লক্ষ শহীদ এবং যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছিল তাদের জন্য। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় তাদের কথা বলা আছে।
তাদের জানা উচিত, নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে। পৃথিবীর সকল সভ্য দেশে এই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।
এটি ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালি জাতি যা কিছু পেয়েছে তার সবই আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই পেয়েছে।
প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে সুযোগের বিষয়টি একটি ব্যাপক ভিত্তিক বিষয়। এতে রাষ্ট্রের সকল পক্ষের সুচিন্তিত মতামত প্রয়োজন। গায়ের জোরে কিংবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে কিংবা রাস্তা দখল করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আদায় জাতির জন্য কোনভাবেই কাম্য নয়। এটি রাষ্ট্রের জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়। এ ধরনের বল প্রয়োগের রাজনীতি আমাদের বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের অরাজকতা আর চলতে দেয়া যায় না।
ছাত্র-ছাত্রীদের সুনাগরিক হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। জনগণের পবিত্র ইচ্ছার প্রতিফলন এই সংবিধান। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা এই সংবিধান। সংবিধান অনুযায়ী আদালতে বিচারাধীন কোন বিষয় নিয়ে নির্বাহী বিভাগ (সরকার) আলাদাভাবে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। রাষ্ট্রপক্ষ হিসাবে সরকার তার প্রত্যাশার কথা আদালতকে জানাতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারপক্ষ, আন্দোলন কারীদের প্রতিনিধি, মূল রীট মামলা দায়েরকারি পক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। আদালত নিশ্চয়ই আইন, সংবিধান, চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা ও এখতিয়ার এবং সর্বোপরি বাস্তবিক অবস্থা বিবেচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে আইন ও প্রসিডিউর অনুযায়ী যা কিছু করার ইতোমধ্যেই সরকার তা করেছে।
আদালতে বিচারাধীন বিষয়গুলো দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। আদালতের কাছ থেকে কোন কিছু পেতে হলে যথাযথ প্রসিডিউর বা আইনি পদ্ধতি মেনেই সেটি পেতে হয়। আইন ও সংবিধান লংঘন করে আদালত পূর্ণাঙ্গ শুনানি ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেনা। এটিই আইনের শাসনের বিধান। সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের প্রসিডিউর উপেক্ষা করে কোন কিছু আশা করার অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা।
যারা দেশের সংবিধান ও সর্বোচ্চ আদালতকে সম্মান দিতে জানে না, তারা সুনাগরিক হতে পারেনা। আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মনে রাখতে হবে, ৩০ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা এই রাষ্ট্র ও সংবিধান পেয়েছি। এই সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষায় এদেশে বহুবার সামরিক শাসন ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হয়েছে। এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি এ দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন- সংগ্রাম করেছেন। এই রাষ্ট্রের সকলের কল্যাণের জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তন তাঁর হাত দিয়েই হয়েছে। এদেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছেন।